হাঁস চাষে বেশি লাভ পাওয়ার সেরা ৫ টি জাত।

 হাঁস চাষে বেশি লাভ পাওয়ার সেরা ৫ টি জাত। লাভজনক হাঁস পালন গাইড।

বাংলাদেশে হাঁস চাষ করে কিভাবে বেশি লাভ পাওয়া যায় জানুন। খাকি ক্যামবেল, দেশ্‌ পেকিন সহ সেরা ৫ টি হাসের জাত, যত্ন ও ইনকাম টিপস সহ বিস্তারিত গাইড।



বাংলাদেশে হাঁস চাষ এখন শুধু শখ নয় বরং একটি লাভজনক ব্যবসা। যারা গ্রামে বা আধার শহরে বসবাস করেন, তারা অল্প পুঁজি দিয়ে হাঁস পালন করে ভালো আয় করতে পারেন। হাঁস পালন তুলনামূলক সহজ, রোগ ব্যাধি কম হয্‌ আর বাজারে হাসির ডিম ও মাংসের চাহিদা সবসময় থাকে। তবে সফল ভাবে লাভবান হতে হলে জানতে হবে-

কোন জাতের হাঁস সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় ও দ্রুত বড় হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক, বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক পাঁচটি হাঁসের জাত এবং তাদের যত্ন, খাবার ওয়ে ইনকাম টিপস।

১ থাকি ক্যাম্পবেল-ডিম উৎপাদনে রাজা

মূল উৎপত্তঃ  ইংল্যান্ড

ধরনঃ ডিম উৎপাদনকারী জাত

বিশেষত্বঃ

  • বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
  • ছোট আকারের হলেও খাওয়ার পরিমাণ কম।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
  • খোলা জায়গায় সহজে পালন করা যায়।

লাভজনক দিকঃ

যারা ডিম বিক্রি করে আয় করতে চান, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত জাত।

একটি থাকি ক্যাম্পবেল হাঁস থেকে বছরে প্রায় 250 থেকে 300 টি ডিম পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

হাঁস চাষের টিপসঃ

  • প্রতি 10 টি হাঁসের জন্য একটি পুরুষ হাঁস রাখো।
  • হাঁসের খাঁচায় শুকনা ও উষ্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি জল ঘাস দিন

২ দেশি হাঁস-বেশি হাঁস পালঃ

মূল উৎপত্তি-বাংলাদেশ

বিশেষত্বঃ

  • স্থানীয় আবহাওয়া খুব সহজে মানিয়ে নেয়।
  • রোগ কম হয় ও যত্ন নেয়া সহজ।
  • মাংস ও ডিম দুইয়ের জন্যই উপযুক্ত।
  • বাজারে চাহিদা অনেক বেশি, কারণ দেশে হাঁসের স্বাদ আলাদা।

দেশি হাঁস চাষে লাভজনক দিকঃ

দেশি হাঁস বছরে গড়ে ১৫০ থেকে ১৮০ টি ডিম দেয় এবং বড় হলে দেড় থেকে ২ কেজি ওজন হয়।

দেশে হাঁসের মাংস বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়, তাই এই ছোট বা মাঝারি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত।

দেশি হাঁস পালনের টিপসঃ

  • খোলা জায়গায় বা পুকুরের পাশে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • খাবারে চালের গুড়া, ভাঙ্গা ধান ও সামান্য মাছের ঘোড়া দিন।
  • প্রতিদিন এক ঘন্টা রোজা রাখলে হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩ ইন্ডিয়ান রানার-মেশিনের মত ডিম দেয়

মূল উৎপত্তিঃ ইন্দোনেশিয়া ও ভারত

ধরনঃ উচ্চ ডিম উৎপাদনকারী জাত

বিশেষত্বঃ

  • বছরে ২৮০-৩০০ টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
  • শরীর লম্বা ও সোজা দৌড়াতে ভালো পারে।
  • কম খাবার খায় কিন্তু উৎপাদন বেশি দেয়।
  • রোগ প্রতিরোধ শক্তি ভালো।

হাঁস চাষে লাভজনক দিকঃ

ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য চমৎকার। এক ডজন হাঁস থেকে মাসে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে খুবই সুন্...

হাঁস চাষের টিপসঃ

ঠান্ডা পরিবেশে ভালো থাকে।
রাতে পর্যাপ্ত আলো ও শুকনা মেঝে দিন।
নিয়মিত পানি অভিটামিন সরবরাহ করুন।

৪ পেকিন হাঁস-মাংস উৎপাদনকারী হাঁস

মূল উৎপত্তিঃ চীন

ধরনঃ মাংস উৎপাদনকারী জাত

বিশেষত্বঃ

  • ৬ থেকে ৭ সপ্তাহে হাঁস বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়।
  • গড় ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত হয়।
  • ডিম কম দেয় তবে মাংসের জন্য লাভজনক।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী।

পেকিন হাঁস চাষে লাভজনক দিকঃ

পেকিন হাঁস দ্রুত বড় হয়, তাই স্বল্প সময় ভালো মুনাফা পাওয়া যায় । একটি হাঁসের মাংস বিক্রি করে ৬০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। অনেক উদ্যোক্তা এখন ব্রয়লার হাঁস ব্যবসা হিসেবে এটি পালন করছেন।

পেকিন হাঁস পালনের টিপসঃ

  1. প্রথম এক মাস গরম পরিবেশে রাখুন।
  2. হাঁসের খাঁচায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস দিন। 
  3. প্রতিদিন পরিস্কার পানি দিন কারণ এরা চান করতে ভালোবাসে।

৫ মুসকোভি হাঁস-কম খরচে বেশি মুনাফা

মূল উৎপত্তিঃ দক্ষিন আমেরিকা

ধরনঃ মাংস উৎপাদনকারী

মুসকোভি হাঁস চাষের বিশেষত্বঃ

  • খুব কম খাবারে দ্রুত বেড়ে ওঠে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।
  • বছরে প্রায়  ৮০-১০০ টি ডিম দেয়।
  • হাঁস মুরগির মতো খাচায় পালন করা যায়।

মুসকোভি হাঁস পালনের লাভজনক দিকঃ

মুসকোভি হাঁস এর মাংস বাজারে দামি এবং স্বাদে অনন্য। একটি হাঁস বড় হতে সময় লাগে ১০-১২ সপ্তাহ এবং বিক্রি করা যায় ৮০০-১০০০ টাকা দরে। যারা কম খরচে শুরু করতে চান, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে উপযুক্ত জাত।

মুসকোভি হাঁস পালনের টিপসঃ

  • সকালে রোদে রাখুন, রাতে খাঁচা শুকনা রাখুন।
  • খাবারের গম, চালের ভুষ্‌ মাছের গোড়া মিশিয়ে দিন।
  • প্রতি সপ্তাহে খাঁচা পরিষ্কার রাখলে হাঁ সুস্থ থাকে।

হাঁস চাষে সফল হওয়ার কিছু টিপসঃ

১ সব সময় পরিষ্কার পানি ও খাবার দিন।

২ রোদে রাখুন এতে হাঁ সুস্থ ও সক্রিয় থাকে।

৩ খাঁচা শুকনো রাখুন, যাতে রোগ না হয়।

৪ হাঁসের খাবার ভিটামিন ও মিনারেল মেশিন।

৫ স্থানীয় বাজারে হাঁস বিক্রির ভালো মাধ্যম তৈরি করুন।

৬ শুরুতে ছোট পরিসরে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়ান।

শেষ কথা-লেখকের মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ হাঁস পালনের জন্য আদর্শ। তবে সফল হতে হলে সঠিক জাত নির্বাচন, পরিচর্যা ও বাজার বুঝে কাজ করা। উপরের পাঁচটি জাতের হাঁস দিয়ে আপনি চাইলে খুব অল্প পুঁজিতে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা ও যত্ন নিলে হাঁস চাষ হতে পারে আপনার পরবর্তী সফল ব্যবসা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন